অধ্যক্ষ কর্তৃক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের স্মারক জাল ও ভুয়া রেকর্ড সৃষ্টি প্রমাণিতঃ
নিজিশ্ব প্রতিনিধি
তিনজন প্রকৃত নিয়োগ প্রাপ্ত শিক্ষকের নিয়োগ বোর্ডের সকল কাগজ টেম্পারিং করে অধ্যক্ষ অন্য পাঁচজন শিক্ষক দের নিয়োগ বোর্ড গঠন ছাড়াই ভুয়া রেকর্ড সৃষ্টি করে অবৈধ প্রভাষক নিয়োগ বৈধ করতে অধ্যক্ষের নানান ছল- চাতুরী। কখনও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, কখনও রেজুলেশন, কখনও বা স্বাক্ষর জালের মতো ঘটনা ঘটিয়েছেন নওগাঁ জেলাধীন নিয়ামতপুর উপজেলার বালাতৈড় সিদ্দিক হোসেন ডিগ্রি কলেজের বহুল আলোচিত অধ্যক্ষ মোঃ আমজাদ হোসেন। অধ্যক্ষের নিয়োগ বানিজ্যের বলি স্বীকার বৈধ নিয়োগ প্রাপ্ত প্রভাষক এরশাদ আলীর বেতন ২০১৯ সালের জুন মাস থেকে চালু হচ্ছে না। রাজশাহী আঞ্চলিক শিক্ষা অফিসের পরিচালকের তদন্তে মিলেছে অধ্যক্ষের জালিয়াতির প্রমাণ।
প্রমাণসহ জালিয়াতির বর্ণনাঃ
(১) নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিঃ
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে ২০১৫ সালের ১ এপ্রিল জাতীয় দৈনিক সমকাল ও রাজশাহীর স্হানীয় দৈনিক সানশাইন পএিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন অধ্যক্ষ। কিন্তু অধ্যক্ষ পরে গোপনে অর্থ লোভে বিষয়ের রদবদল করেন।
(২) জাতীয়বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোয়ন পত্রঃ জাতীয় বিশব্বিদ্যালয়ের মনোনয়ন ( স্মারক ০৭(র-৭০৭) জাতীঃ বি/কঃ পঃ/২০৭০৯),তারিখঃ ২৮/০৬/২০১৫ ইং এই বৈধ চিঠিতে জাতীয় বিশব্বিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর ড. মোঃ শামসুদ্দীন ইলিয়াসের স্বাক্ষর রয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এই আদেশের স্মারক, স্বাক্ষর ও তারিখ অধ্যক্ষ গোপনে জাল করে বিষয় পরিবর্তন করে ভুয়া চিঠি তৈরী করেছেন।
(ত) ডিজি’ র প্রতিনিধি চিঠি জালঃ এই বৈধ চিঠির (স্মারক নং ৩৯ (ক)/ স বিএমসি মক/২০১৫), তারিখঃ ২৬/০৭/২০১৫ ইং, বালাতৈড় সিদ্দিক হোসেন ডিগ্রি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে গার্হস্থ্য অর্থনীতি, ডিগ্রি পর্যায়ে অর্থনীতি ও মনোবিজ্ঞান এই তিনটি বিষয়ে নিয়োগের জন্য নির্বাচন কমিটিতে নওগাঁ সরকারি বিএমসি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ স.ম. আব্দুস সামাদ আজাদ ডিজি’র প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অধ্যক্ষ আমজাদ হোসেন ডিজির ডিজির প্রতিনিধির স্বাক্ষর জাল করেছেন। আসল চিঠির স্মারক, তারিখ ও স্বাক্ষর জাল করে অধ্যক্ষ ভুয়া চিঠি বানিয়ে সেখানে ( বাংলা, ইংরেজি, দর্শন, রাষ্ট্র বিজ্ঞান ও ভূগোল) যুক্ত করে অধ্যক্ষ আটটি বিষয় বসিয়ে নিয়োগের উল্লেখ করেছেন অর্থ লোভী অধ্যক্ষ।
(৪)মূল রেজুলেশন কাটাকাটিঃ মূল রেজুলেশনের যে লাইনে তিনটি বিষয় লেখা ছিল সেই লাইন অধ্যক্ষ গোপনে কাটাকাটি করে ঐ পাঁচটি বিষয় লিখেছেন যা অনেক বড় অপরাধ।
(৫) সি এস কপি জালঃ অধ্যক্ষ প্রকৃত সি এস কপির সকল স্বাক্ষর জাল করে নকল সিএসকপি তৈরি করেছে ভুয়া নিয়োগ দেওয়ার লক্ষে।
(৬) শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের স্মারক পরিবর্তন করে অগ্রায়ন পত্র তৈরিঃ অধ্যক্ষ পরবর্তীতে ২০১৯ সালের এমপিওর অনুমতি পাওয়ায় অধ্যক্ষ শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের সঠিক (স্মারক নং ৩৭.০০.০০০০.০৭৪.০০২.০০২.২০১৯(অংশ -৫).৮৩, তারিখঃ ২৯/০৪/২০২০ ইং, এটা না দিয়ে স্মারক পরিবর্তন করে এই (স্মারক ৩৭.০২.০০০০.১০২.৯৯.০০১.২০.১৪) লিখে প্রভাষক মোঃ এরশাদ আলীর বেতনের জন্য অধ্যক্ষ নিজেই অগ্রায়ন পত্র তৈরি করেন যা অবৈধ। অধ্যক্ষ আমজাদ হোসেন গোপনে ভুয়া ৫ টি বিষয় নিয়োগ দানের লক্ষে উপরোক্ত সকল তথ্য জালিয়াতি করে নিয়োগ পরিবর্তন করে এরশাদ আলীর এমপিও আবেদন দাখিল করেন রাজশাহী আঞ্চলিক শিক্ষা অফিসে। কিন্তু সেখানেই ঘটে যায় চরম বিপত্তি। ধরা পড়ে অধ্যক্ষের নিয়োগ জালিয়াতি। ইতিমধ্যে পাল্টে যায় নিয়োগ প্রক্রিয়া । নিয়োগের ক্ষমতা যখন এনটিআরসি এর হাতে তখন দিশেহারা হয়ে পড়ে অধ্যক্ষ। কেননা ইতোমধ্যে আরও পাঁচজন কাছ থেকে অধ্যক্ষ গোপনে মোটা অঙ্কের টাকা নেওয়ার মাধ্যমে তাদের অবৈধ পাঁচটি নিয়োগ কে বৈধ করার জন্য অধ্যক্ষ আমজাদ হোসেন প্রভাষক মোঃ এরশাদ আলী (অর্থনীতি) এর বৈধ নিয়োগ সংক্রান্ত সকল চিঠি পত্র এবং রেজুলেশন টেম্পারিং করে (যা উপরে উল্লেখিত রয়েছে) এরশাদ আলী (অর্থনীতি) এবং অবৈধ নিয়োগ দেখানো মোঃ কামাল হোসেন ( দর্শন) এর বেতনের আবেদন অধ্যক্ষ গোপনে প্রথম ০২/০৫/২০২০ তারিখে দাখিল করেন রাজশাহী আঞ্চলিক শিক্ষা অফিসে। সেখানেই ধরা পড়ে যায় জালিয়াতির বিষয় টি। আটকে যায় এরশাদ আলী ন্যায্য বেতন- ভাতাদি। বেতন না হওয়ার মন্তব্য কপিতে অধ্যক্ষের জালিয়াতির বিষয় টি প্রমাণ রয়েছে। রাজশাহী আঞ্চলিক শিক্ষা অফিসের পরিচালক মহোদয় সকল জালিয়াতির প্রমাণ পান এবং তিনি অধ্যক্ষের নিকট জালিয়াতির কৈফিয়ত তলফ করেন কিন্তু অধ্যক্ষ জবাব দেন নাই। এক পর্যায়ে রাজশাহী আঞ্চলিক শিক্ষা অফিসের পরিচালক মহোদয় ২০২১ সালের ২৭ অক্টোবর সরেজমিনে কলেজে গিয়ে তদন্ত করেন এবং জালিয়াতির প্রমাণ পান।
অধ্যক্ষ কর্তৃক অনিয়ম ও বিধিবহির্ভূত নিয়োগ দানের লক্ষে ভুয়া রেকর্ড সৃষ্টি করা হয়েছে বিধায় জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০২১ এর ১৮.১ (গ) ও ( ঙ) ধারা অনুসারে অধ্যক্ষ ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে শাস্তি মূলক ব্যবস্হা গ্রহনের জন্য মাউসির নির্দেশনা চেয়েছে রাজশাহী আঞ্চলিক শিক্ষা অফিসের পরিচালক মহোদয়। এখন বর্তমানে অধ্যক্ষ নিজের অপরাধ লুকানোর জন্য ও শাস্তি থেকে বাঁচতে পুনরায় এরশাদ আলীর সাথে কলেজে নানা
অনিয়ম ও যড়যন্ত্র করছেন। যেমন- হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করতে না দেওয়া, অর্থনীতি বিষয়ে ভর্তিকৃত ছাত্র ছাত্রীর না লাল কালি দিয়ে কেটে বাদ দেওয়া ও অর্থনীতি বিষয়ে ছাত্র ভর্তি না করানো ইত্যাদি নানা যড়যন্ত্র করছেন অধ্যক্ষ এরশাদের বিরুদ্ধে। এছাড়া অধ্যক্ষ এরশাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা নানা ভাবে অকথ্য ভাষা, নানাভাবে উস্কানিমূলক স্ট্যাটাস ও কথা, গাধা, মাথা পাগল এমন নানান যড়যন্ত্র করছেন। সুতরাং বর্তমানে কলেজে যাওয়া আসা অনেক ভয় ও শঙ্কায় আছেন এরশাদ আলী।
সর্বশেষ শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাউসি অধিদপ্তরের প্রতি অনুরোধ অধ্যক্ষের এমন বড় অনিয়মের বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তি বাস্তবায়ন করুণ। সেই সাথে প্রভাষক মোঃ এরশাদ আলীর বেতন – ভাতাদি স্বল্প সময়ের মধ্যে চালু করে দিয়ে তিনার মা-বাবার মুখে হাসি ফোটাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাউসির প্রতি অনুরোধ করছি।