ফরিদগঞ্জে ১২ বছর বয়সে ভেকুর স্টিয়ারিংয়ে বসে নিয়ন্ত্রণ করছে ফাহাদ

ফরিদগঞ্জে ১২ বছর বয়সে ভেকুর স্টিয়ারিংয়ে বসে নিয়ন্ত্রণ করছে ফাহাদ

জসিম উদ্দিন, ফরিদগঞ্জ:

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার ৯ নং গোবিন্দপুর ইউনিয়নের ধানুয়া গ্রামে ১২ বছরের শিশু ফাহাদ কে
মাটি কাটার ভেকু গাড়ি চালানোর দৃশ্য দেখা গেছে।

বুধবার (১৫ফেব্রুয়ারি) সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার ধানুয়া গ্রামের খান বাড়ি সংলগ্ন একটি বিশাল ফসলি জমিতে মাছের গের বানানোর জন্য বেকু দিয়ে মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে। সেই বেকুটি নিয়ন্ত্রণ করছে একটি ১২ বছরের শিশু। শিশুটির নাম মোঃ ফাহাদ হোসেন পিতা মোঃ শরীফ হোসেন গ্রাম ধানুয়া পাটোয়ারী বাড়ি সে কোরআনে দুই পারা হাফেজ হওয়ার পর পড়ালেখা ছেড়ে দেয়। গত দুই তিন মাস ধরে সে বেকু চালানো শিখে। এখন তার ওস্তাদ তাকে এই বেকু দিয়ে ট্রাকে মাটি দেওয়ার জন্য বেকুটি তার কাছে হস্তান্তর করে।

শিশু ড্রাইভার ফাহাদের খোঁজখবর নেওয়ার জন্য মাটি কাটার পেটের পাশে থাকা লোকজনের সাথে কথা বলার এক পর্যায়ে ফাহাদের পিতা শরীফ হোসেন মুচকি হাসি দিয়ে বলেন ছেলেটি আমার। সে পড়ালেখা ছেড়ে দিয়েছে এজন্য তাকে বেকুর ড্রাইভিং শিখিয়েছি এবং সে এখন এই পজেটে বেকু দিয়ে ট্রাকে মাটি উত্তোলন করে।

এক জন সংবাদকর্মী হয়ে আমি হতভম্ব আমাদের চিন্তা চেতনা কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে।এখানে অপ্রাপ্ত বয়সে স্টিয়ারিংয়ে বসা পুত্রের দোষ কি দেব? আসলে তো এই দায় অভিভাবকদের। সন্তানদের হাতে গাড়ির চাবি তুলে দিচ্ছেন তারাই। কেউ কেউ সন্তানের বীরত্ব দেখতে পাশে সওয়ার হচ্ছেন। এই যে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগেই, সন্তানের হাতে গাড়ি চাবি তুলে দেয়া, সন্তান প্রাপ্তবয়স্ক হলেও পথে কীভাবে গাড়ি চালাচ্ছে, তার বন্ধু কারা, সে মাদকাসক্ত কি না, এদিকে নজর দেয়ার দায়িত্ব অভিভাবকদের। অভিভাবক হিসেবে আমরা সেই দায়িত্ব থেকে অনেক দূরে।

আমরা নিজেদের সন্তানের নৈতিকতার শৃঙ্খলায় বাঁধতে পারছি না। কারণ নিজেরাই নৈতিকতার পথ থেকে সরে গেছি। আমাদের অবৈধ, বেপরোয়া আয়ের উৎস সন্তানদের কাছে দৃশ্যমান। তাই তারা আমাদের কাছে যখন আবদার করে, সেই আবদারে এক প্রচ্ছন্ন হুমকিও থাকে। না দিলে লোকে জানবে অবৈধ আয়ের উৎসের কথা। নিজেরাও আমরা অবৈধ অর্জন উপভোগে এতটাই মাতোয়ারা থাকি যে, সন্তানদের দিকে নজর রাখার অভ্যাস বা নিয়ম ভুলে যাই। কখনও কখনও নিজেদের ভোগ-উপভোগে সন্তানদেরকেও সঙ্গী করি।

নিজেরাই নৈতিকতার শৃঙ্খলায় না থাকায়, ওই পথে সন্তানদের চিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার মনের জোরও আমরা হারিয়ে ফেলেছি। আমাদের কোনো কোনো পরিবারে হয়তো সচ্ছলতা এসেছে জলোচ্ছ্বাসের গতিতে। সেই জলোচ্ছ্বাস দুই কূল এমনভাবে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে যে, তাতে ব্যক্তিগত ও সামাজিক দুর্ঘটনা বাড়ছেই। সড়ক দুর্ঘটনার মাধ্যমে হয়তো আমরা এর বাহ্যিকতা দেখতে পাচ্ছি, ভেতরও পুড়ছে। কবে যে সেই দগ্ধতা বিস্ফোরণে রূপ নেয় সেই আতঙ্কে আছি।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এসব বিষয়ে নজর দেওয়া অতিব জরুরী রাস্তাঘাটে মোটরসাইকেল অটো বাইক সহ বিভিন্ন যানবাহনে অপপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেদের ড্রাইভিং করা দৃশ্যমান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD