ফরিদগঞ্জে হঠাৎ দেখা মিলল গরু দিয়ে হাল চাষের

ফরিদগঞ্জে হঠাৎ দেখা মিলল গরু দিয়ে হাল চাষের

জসিম উদ্দিন, ফরিদগঞ্জ:

কৃষি প্রধান বাংলাদেশে এক সময় লাঙল ও গরুর হাল ছাড়া কৃষি জমি প্রস্তুতের কথা চিন্তাই করা যেত না। কিন্তু কালের পরিক্রমায় ও কৃষি যন্ত্রের দাপটে হারিয়ে গেলেও বাংলার এ অতীত ঐতিহ্য চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার গ্রামগুলোতে এখনও দেখা যায়।

রাখাল রাজার বাঁশি কেটে যায় বেলা
চাষী ভাই করে যাস কাজে নাই হেলা
সোনার ফসল ফলেও ক্ষেত ভরা ধান
সকলের মুখে হাসি গান আর গান”

চরণ গুলো আ.ন.ম বজলুর রশিদের আমাদের দেশ কবিতা থেকে নেওয়া। চরণ গুলোর মতই একটা সময় কাক ডাকা ভোরে কৃষকরা গরুর নাঙ্গল জোয়াল নিয়ে বেরিয়ে যেত জমিতে হাল চাষ করার জন্য ।আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির ছোঁয়ায় হারিয়ে গেছে এই চির চেনা দৃশ্যটি। তবে চলতি মুসনে হঠাৎ দেখা মিলল উপজেলার দেইচর গ্রামেএমনই একটি দৃশ্য।

কৃষি প্রধান বাংলাদেশে প্রায় ৭০ ভাগ লোক কৃষক।এক সময় কৃষক কামারের তৈরী একটুকরো লোহার হাল এবং কাঠ মিস্ত্রীর হাতে তৈরীর কাঠের লাঙ্গল জোয়াল আর বাঁশের তৈরি মই ব্যবহার করে জমির চাষাবাদ করতো। কৃষি কাজে ব্যবহৃত এসব স্বল্পমূল্যের কৃষি উপকরণ এবং গরু দিয়ে হাল চাষ করে তারা যুগের পর যুগ ধরে চাষাবাদ করতো।

বাংলাদেশের হাজার বছরের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে গরু, লাঙল ও জোয়াল। আধুনিকতার ছোঁয়ায় হালচাষের পরিবর্তে এখন ট্রাক্টর অথবা পাওয়ার টিলার দিয়ে অল্প সময়ে জমি চাষ করা হয়। এক সময় দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে কৃষক গরু, মহিষ পালন করা হতো হালচাষ করার জন্য। অনেকে গবাদিপশু দিয়ে হালচাষকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। আবার অনেকে ধান, গম, ভুট্টা, সরিষা, আলু প্রভৃতি চাষের জন্য ব্যবহার করতেন। নিজের সামান্য জমির পাশাপাশি অন্যের জমিতে হালচাষ করে তাদের সংসারের ব্যয়ভার বহন করতেন।

শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি)ফরিদগঞ্জ উপজেলার দেইচর গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, এ গ্রামের মাঠে আমান উল্লাহ বাউল (৫৫)প্রতি দয়া (১৫ শতাংশ)জমি ৫০০ টাকা হারে এক চাষ তার দুটি গরুর হাল ও লাঙল দিয়ে চাষ করছেন।

আমানন উল্লাহ বকাউল জানান, পূর্ব পুরুষের হাত ধরে প্রায় ৩০-৩৫ বছর আগে থেকেই এই কাজের সঙ্গে তিনি জড়িত। প্রতিবছর চাষের মৌসুমে প্রতিদিন ৮০০-১০০০ টাকার মতো আয় হয় তার। উপার্জিত এই অর্থ দিয়ে গরুর খাদ্য ও সংসার খরচ হয়। তবে ফাল্গুন চৈত্র বৈশাখ মাসে খরচের তুলনায় আয় অনেকটাই কম।

তিনি আরো বলেন, বর্তমানে আধুনিক যন্ত্রের কারণে গরুর হালের চাপ কমে গেছে। এতে সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়।

২ নং বালীথুবা পূর্ব ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ বলেন, গরু-মহিষ, লাঙ্গল ও জোয়াল ছিলো আমাদের ঐতিহ্য ও পরিবেশবান্ধব কৃষি পদ্ধতি। লাঙল-গরুর হাল চাষ এখনও জনপ্রিয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD