অঙ্কে এগিয়ে শাসক, আশায় বিরোধীরাও

প্রার্থী নির্বাচনে চেনা ছকেই প্রয়াত সাংসদের স্ত্রীকে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। বামেরা ভরসা রেখেছে পুরনো মুখেই। প্রার্থী ঘোষণার পরে প্রচারে নেমে পড়েছে দুই দল। শুরু হয়ে গিয়েছে মিছিল ও দেওয়াল লিখন। তবে বিজেপি ও কংগ্রেস এখনও প্রার্থী খুঁজতে ব্যস্ত।

উলুবেড়িয়ার প্রয়াত সাংসদ সুলতান আহমেদের মৃত্যুর পরে এই কেন্দ্রে উপনির্বাচনের ঘোষণা ছিল সময়ের অপেক্ষা। যুযুধান সব দলই সেই কথা মাথায় রেখে নিজেদের  রণনীতি তৈরি করতে শুরু করে দিয়েছিল। জেলা তৃণমূলে কানাঘুষো ছিল, দলের প্রার্থী হবেন সুলতানের ছোট ছেলে শারিক। বছর পঁচিশের লাজুক যুবকটিকে দলের কিছু অনুষ্ঠানে হাজিরও করা হয়েছিল। কিন্তু প্রার্থী ঘোষণার পরে দেখা গিয়েছে, নেত্রী বেছে নিয়েছেন প্রয়াত সাংসদের পত্নী সাজদা আহমেদকে। এই ঘটনায় তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব থেকে শুরু করে নিচুতলার কর্মীরা বেশ অবাক। কারণ সাজদাকে তাঁর স্বামীর সঙ্গে এলাকায় সেভাবে দেখা যায়নি। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময়ে উলুবেড়িয়ায় সুলতানের অস্থায়ী কার্যালয়ে এসে সাজদা মাঝে মধ্যে থাকতেন। কিন্তু তখনও সে ভাবে বাইরে আসেননি। তবে এ সব নিয়ে এখন ভাবতে রাজি নন তৃণমূল কর্মীরা। হাওড়া (গ্রামীণ) জেলা তৃণমূল সভাপতি পুলক রায় বলেন, ‘‘সাজদা আহমেদ হলেন দলনেত্রীর পাঠানো প্রার্থী। তিনি আমাদের শ্রদ্ধেয়। তাঁকে জেতাতে দল ঝাঁপিয়ে পড়বে।’’

পরিসংখ্যানের বিচারে উলুবেড়িয়া লোকসভা কেন্দ্র তৃণমূলের জন্য ‘সহজ’ আসন। ২০১৪ সালে চতুর্মূখী লড়াইয়ে সুলতান ৫ লক্ষ ৭০ হাজার ভোট পেয়েছিলেন। বাম প্রার্থী সাবিরউদ্দিন মোল্লা পান ৩ লক্ষ ৬৯ হাজার ভোট। বিজেপি প্রার্থী রঞ্জিতকিশোর মোহান্তি পান ১ লক্ষ ৩৭ হাজার ভোট। কংগ্রেসের অসিত মিত্র পেয়েছিলেন ৮৭ হাজার ভোট। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে বামেদের জোট ছিল। তার পরেও উলুবেড়িয়া লোকসভার অধীনে থাকা সাতটি বিধানসভার মধ্যে উলুবেড়িয়া পূর্ব, উলুবেড়িয়া দক্ষিণ, উলুবেড়িয়া উত্তর, শ্যামপুর, বাগনান এবং উদয়নারায়ণপুরে বিপুল ভোটে জিতেছিলেন তৃণমূল প্রার্থীরা। শুধু আমতা কেন্দ্রে জোটপ্রার্থীর কাছে সামান্য ভোটে হেরে গিয়েছিল তৃণমূল। উলুবেড়িয়ার তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, এ বারের উপনির্বাচনে জয়ের ‘মার্জিন’ আরও বাড়বে।

তবে পাটিগণিতের এই হিসেবকে গুরুত্ব দিতে নারাজ বিরোধীরা। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় শ্যামপুরে এসে দলীয় বৈঠকে বলে গিয়েছেন, উলুবেড়িয়ায় জিততে পারলে সেটি দলের কাছে মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হবে। দলের হাওড়া (গ্রামীণ) জেলা সভাপতি অনুপম মল্লিকের দাবি, ‘‘বর্তমানে রাজনৈতিক পরিস্থিতি আলাদা। আমাদের ভোট অনেকটাই বাড়বে। আমরা জেতার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছি।’’ জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী বাম প্রার্থী সিপিএমের সাবিরউদ্দিন মোল্লা। তাঁর কথায়, ‘‘বিজেপিকে আমরা হিসেবের মধ্যেই আনছি না। তৃণমূলের দুর্নীতি ও সার্বিক ব্যর্থতাই আমাদের জেতাবে।’’

সংগঠন তলানিতে ঠেকলেও হাল ছাড়তে রাজি নয় কংগ্রেস। হাওড়া জেলা কংগ্রেস সভাপতি পলাশ ভাণ্ডারীর কথায়, ‘‘লড়াইয়ের ময়দান থেকে কংগ্রেস সরবে না। এআইসিসি প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত করলেই আমরা পুরোদমে প্রচারে নেমে পড়ব।’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD