কজন পুলিশ কর্মকর্তার দ্বায়ীত্ব
————————পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন (নড়াইল)
বিশেষ প্রতিবেদক
জনবন্ধু পুলিশ নিয়েও রাজনীতি চলে। অবশ্যি এ রাজনীতির জন্ম আজ বা এখন থেকে পুলিশ সাধারণ মানুষের সবচেয়ে কাছের বন্ধু। সমাজের শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রেখে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছানোর মাধ্যম শুধু পুলিশেরই আছে। কিন্তু বিভিন্ন সময় কিছু পুলিশের বিকৃত কাজে অনেক ক্ষেত্রেই পুলিশ নামটি সাধারণ মানুষের কাছে বন্ধুর পরিবর্তে আতঙ্কে পরিণত হয়।
পুলিশ মন্দ, আবার পুলিশই সর্বোচ্চ মনুষ্যত্বের অধিকারী। এরকম একজন পুলিশ সদস্যকে চোখে পড়েছে টাঙ্গাইলে। যিনি শুধু পুলিশ নন সর্বোচ্চ মানবিক গুণাবলীর অধিকারীও। নাম আসাদুজ্জামান টিটু। টাঙ্গাইল জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক। কাজের ফাঁকে অন্যের জন্য কিছু করাটা তার প্রতিমুহূর্তের ভাবনা। একজন প্রতিবন্ধী শিশুকে নিজের মনে করে তার দায়িত্ব নেয়াটা অনেকেরই নজর কেড়েছে। হৃদয় স্পর্শ করে নিয়েছেন তার ব্যতিক্রমী সব উদ্যোগ।
গত চল্লিশ বছরের নয়। সব রাজা বাদশাহদের সময়ই পুলিশ ছিল, ভিন্ন নামে, ভিন্ন মোড়কে। তবে মূল কাজ ছিল শান্তি-শৃক্মখলা প্রতিষ্ঠা ও রক্ষা করা। বৃটিশ-ভারতের ১৮৬১ সালে ৫নং আইন অনুসারে যে পুলিশ বাহিনী গঠিত হয় লাল-সবুজের পতাকা খচিত এই বাংলাদেশ তার উত্তরসূরী, পরম্পরা। ঔপনিবেশিক আমলের পুলিশ বাহিনী তাই আমাদের কাঁধে ভর করে আছে। কোন অবস্থায়ই তাকে নামানো যাচ্ছে না, ঢেলে সাজানো যাচ্ছে না। অথচ এ পুলিশ বাহিনী গঠনের পর পুলিশ এ্যাক্টের আওতায় ১৯২৭ সালে তিনটি খন্ডে পিআরবি সংশোধিত হয়। যা ১৯৪৩ সালে প্রকাশিত হয় এবং পরবর্তীতে যুগের প্রয়োজনে চাহিদা অনুসারে যেমনটি সংশোধন হওয়া প্রয়োজন ছিল তেমনটি হয়নি। পুলিশকে শতভাগ জনবন্ধুতে রূপান্তরিত করা। এতো কিছুর পরেও পুলিশ জনকল্যাণে জন-শান্তি শৃক্মখলায়, জানমালের নিরাপত্তায় সবচেয়ে কঠিন ও দুরূহ দায়িত্ব পালন করে। একই দেশের অন্য সরকারি অফিসে প্রতিষ্ঠানে শিল্প কারখানায় নিযুক্তদের চেয়ে ও আইএলও কনভেনশনের বাইরে কাজ করে, সুনির্দিষ্ট কর্মঘণ্টার বাইরে পরিশ্রম করে, সততা দায়িত্বের কথা মস্তিষ্কে ক্রিয়াশীল রাখে। ভুললেই সমূহ বিপদ! দায়িত্বে অবহেলাজনিত অপরাধ! পুলিশ বাহিনী নিয়ে তাই তর্ক-বিতর্কের ইয়ত্তা নেই। প্রশ্ন ওঠে পুলিশের সুযোগ সুবিধা নিয়ে। বাদ পড়ে না ঘুষ-দুর্নীতি-অনিয়ম-যথেচ্ছাচার-ক্ষমতার অপব্যবহার-দমন-নিপীড়ন-দলন-আক্রমণও। যেভাবেই প্রশ্ন উঠুক না কেন পুলিশ বাহিনীর কোন বিকল্প নেই। তাই পুলিশ বাহিনীতে আধুনিকায়ন হওয়া জরুরি, ঢেলে সাজানো প্রয়োজন। পুলিশ নাগরিকের সেবক। সেবাই পুলিশের ধর্ম। সেবাই পুলিশের কর্ম। যদিও কখনো-কখনো পুলিশকে শত্রুর আচরণ করতে দেখা যায়। সব পুলিশ নয়, কোন কোন পুলিশের চুরি, ডাকাতি, দস্যুতা, খুন, ঘুষ, দুর্নীতি, অপহরণ, ধর্ষণ, পরকীয়া, ব্যভিচার, বলাৎকার, সংশ্লিষ্টতার খবর প্রকাশ পায়। কোন কোন পুলিশের ব্যাপারে দেওয়ানী ফৌজদারি অপরাধের প্রশ্ন ওঠে। তাই বলে পুরো পুলিশ বাহিনী সম্পর্কে বিষোদগার করার কোন সুযোগ নেই। পুলিশ বাহিনী আছে বলেই আজও আমরা শান্তি-স্বস্তিত্বে, শৃক্মখলা-নিরাপত্তায়, জানমাল নিয়ে চলাফেরা করতে পারি। পুলিশ সক্রিয় থাকে বলেই রাষ্ট্র ও তার জনগণ কল্যাণ ও সমৃদ্ধির পথে অগ্রসর হতে পারছে। পুরোমাত্রায় না হলেও অভয় পাচ্ছে, উপেক্ষা করতে পারছে সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি। এখনও পর্যন্ত পুলিশকে বাদ দিয়ে কিছু ভাবা যায় না। ভাবা যাবেও না। তবে পুলিশকে মনে রাখতে হবে জনগণের টাকায় রাষ্ট্র তাদের কর্মক্ষেত্রের সুযোগ করে দিয়েছে। জনগণের কাছে, অন্যভাবে বললে রাষ্ট্রের কাছে তাদের জবাবদিহিতা রয়েছে। একই সাথে বাড়াতে হবে ঝুঁকি ভাতা ও ট্রান্সপোর্ট সুবিধাও। জন সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে বাড়াতে হবে আইন ও মানবাধিকার বিষয়ক প্রশিক্ষণ। মানসিক অস্থিরতা দূর করার জন্য পুলিশ সদস্যের স্ত্রী বা স্বামী সংসারের সাথে যোগাযোগ যৌক্তিক পর্যায়ে থাকে সে ব্যবস্থা করতে হবে। পুলিশ বাহিনীর সদস্য সংখ্যা বাড়িয়ে কর্মঘণ্টা কমিয়ে আনতে হবে, প্রয়োজনে রিজার্ভ পুলিশ কমিয়ে থানায় পুলিশ সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে, দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃক্মখলার ব্যাপারে পুলিশের উপরে যাতে সরকারের অন্য কোন বাহিনীর খবরদারি না করতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে, পুলিশ কোন অপরাধ করলে তার তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও দৃষ্টান্তমূলক হতে হবে, সকল নাগরিক আইনের চোখে সমান এ চেতনা সবার জন্য সমভাবে কার্যকর করতে হবে। পুলিশ ও জনগণ একে অন্যের উপর নির্ভরশীল। জনগণ শব্দটি ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয় যা রাষ্ট্র পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়। আর পুলিশ হলো রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে নিযুক্ত রাষ্ট্রের স্বার্থে পরিচালিত রাষ্ট্র ও তার নাগরিকদের জানমালের নিরাপত্তায় নিয়োজিত নিবেদিত প্রাণ বাহিনী। তাই নড়াইলের পুলিশ সুপার মো: জসিম উদ্দিনের নেতৃত্বে নড়াইল জলার পুলশ বাহিনীকে নিয়ে সরকারের আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে একযোগ কাজ করে আসছে। ইতিমধ্যে তিনি নড়াইল জনগনের জানমাল নিরাপত্তায় বেশ সুনাম অর্জন করেছন। নড়াইলবাসি তার উপর আজ অনেকটা ভরসা করতে শুরু করেছে। তবে তিনি বলেন, নড়াইল জেলায় মাদকমুক্ত ও সন্ত্রাস দমনে আমি প্রতিঞ্জাবদ্ধ।তবে কোন অণ্যায়কারীকে ছাড় দওয়া হবে না সে যেই হোক না কেন। আর এলাকা থেকে মাদক মুক্ত করেই ছাড়ব বলে জিড়ো ট্রলারেঞ্জ ঘোষনা করেছেন। এছাড়া তিনি নড়াইলে যোগদানের পর অনেকটাই মাদক এবং সন্ত্রাসমুক্ত অনেকটাই কমেছে বলে এলাকাবাসি ব্যক্ত করেন।
Share this: