Breaking News

ড. মোঃ সবুর খান : স্বপ্নের ফেরিওলা

ড. মোঃ সবুর খান : স্বপ্নের ফেরিওলা

মাইনুল হাসান দুলন পাটওয়ারী

‘নীল’ বাস্তব জীবনের মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তানের ছদ্মনাম। মানুষের মতো মানুষ হবার লক্ষ্যে উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন বাস্তবায়নে দেশের অন্যতম স্বনামধন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির টেঙ্টাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি হয়। চিরচেনা বাংলার মধ্যবিত্ত পরিবারে অর্থসঙ্কট দৈনন্দিন ব্যাপার, যাঁরা মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান তাঁরা খুব ভালো করেই এই ব্যাপারটা অনুভব করতে পারে। অর্থসংকটে শিক্ষাপর্বের মাঝপথে ‘নীল’-এর মাথার উপর আকাশ ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম; অদম্য ‘নীল’ পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্যে নানা উপায় খুঁজতে থাকে। পরিচিত মাধ্যমে টিউশনি বা খ-কালীন চাকুরি জোগাড়ের অবিরাম প্রচেষ্টা। ঢাকার রুক্ষ নাগরিক জীবনে তা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। কঠিন বাস্তবতায় চোখের নোনাজল আর কপালের ঘাম মিলেমেশে একাকার। সদ্য কৈশোর পেরুনো নীলকে প্রচ- হতাশা জেঁকে ধরে। অবশেষে তাঁর বড় বোন ও ভাই সমস্ত সঞ্চয়ের টাকায় সে হতাশার কালো মেঘ আংশিক দূর হয়। এ কঠিন বাস্তবতার ছাপ সদ্য যুবকের হৃদপি-ে গেঁথে যায়। হতাশা রূপান্তরিত হয় একটা কিছু করার তাড়নায়। নীল যেনো ক্ষুধার্থ সিংহ। নীল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো এক অনুষ্ঠানে ড. মোঃ সবুর খানের মুখে উদ্যোক্তা শব্দটি প্রথমবারের মতো শুনে। পুরো বিষয়টি গভীর মনোযোগে শোনার পর ‘উদ্যোক্তা’ ব্যাপারটি তাঁর হৃদয়ে গেঁথে যায়। নীল পণ করলো সে সত্যিকারের উদ্যোক্তা হবে। পড়াশোনার পাশাপাশি সে উদ্যোক্তা হওয়ার চেষ্টা চালালো। আশেপাশে পরিচিতজনের মাধ্যমে স্বল্প মূলধনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে নীল একটা ছোটখাট ব্যবসা দাঁড় করিয়ে ফেলে। ব্যবসায় লাভ কখনো ঈদের চাঁদের মতো ধরা দেয় আবার কখনো জোনাকীর অন্ধকার। সে জানে উদ্যোক্তা হবার এ পথ বরষার আকাশের মতো ক্ষণে ক্ষণে রং বদলায়। তবে টিকে থাকতে হলে ধীরে স্থীরে এগুতে হবে। নীল সে ভাবনা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নেয়ার চেষ্টা করে। পরবর্তীতে ভালো ফলাফল তাঁকে আশাবাদী করে তোলে। বর্তমানে নীল তার অভীষ্ঠ লক্ষ্যে কয়েক ধাপ এগিয়েছে। বর্তমানে তার কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে অর্ধ শতাধিকের অধিক কর্মী কর্মরত। নীল তার স্বপ্নপূরণে এগিয়ে চলছে। ওহ হ্যাঁ নীল কিন্তু আজকের গল্পের মূল উপজীবী নয়। আজকের মূল উপজীবী নীলের মতো হাজারো স্বপ্নবাজ তরুণ উদ্যোক্তা গড়ার কারিগর চাঁদপুরের কৃতী সন্তান ড. মোঃ সবুর খান। ড. মোঃ সবুর খান ১৯৬৫ সালে চাঁদপুরের বাবুরহাটে ব্যবসায়ী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চ শিক্ষাগ্রহণ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অবস্থায় পাওয়া বৃত্তির জমানো টাকা পুঁজি করে উদ্যোক্তা হবার পথে পা বাড়ান। গড়ে তুলেন দেশের অন্যতম প্রথিতযশা আইটি প্রতিষ্ঠান ‘ড্যাফোডিল কম্পিউটার্স লিমিটেড’ যা ২০০৩ সালে পাবলিক লিস্টেড কোম্পানীতে পরিণত হয়। ২০০২ সালে সর্বাধিক ভোট পেয়ে ‘বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি’র সভাপতি নির্বাচিত হন। ব্যবসার পাশাপাশি ২০০২ সালে দেশ সেবার মহান ব্রতে প্রতিষ্ঠা করেন ‘ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি’। বর্তমান প্রজন্মকে ভবিষৎ পৃথিবীর সাথে তাল মিলিয়ে চলার লক্ষ্যে প্রতিনিয়ত উৎকর্ষ সাধন করে চলেছেন। আগামীর বাংলাদেশ, অর্থনীতির চালিকাশক্তি, অর্থনৈতিক নেতৃত্ব তৈরির লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠা করেছেন দেশের একমাত্র ডিপার্টমেন্ট অব এন্টাপ্রিনয়রশীপ এন্ড ডেভেলপমেন্ট। যেখানে বলা যায় বাংলাদেশের আগামীর উদ্যোক্তা তৈরির কারখানা, যাঁরা দেশ ও বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা রাখবে। আগামীর উদ্যোক্তাদের প্রস্তুত করতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আয়োজন করছেন নানা প্রতিযোগিতার। আঠারো কোটি মানুষের বাংলাদেশ, জনসংখ্যার তুলনায় প্রাকৃতিক সম্পদ অপ্রতুল্য কিংবা বলতে পারি আমাদের যা প্রাকৃতিক সম্পদ আছে তা যৎসামান্য। বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে টিকে থাকতে হলে আঠারো কোটি জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করার কোনো বিকল্প নেই। আমাদের জনসংখ্যার শতকরা ৩০ ভাগই বয়সে তরুণ। এই সম্ভাবনাময় তরুণদের যদি কর্মমুখী শিক্ষা কর্মক্ষেত্রে সঠিক নেতৃত্বগুণে পরিণত করা যায় তাহলে এরা দেশের অর্থনীতির আমূল পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বর্তমান চাকুরির বাজারে চাকুরির তুলনায় চাকুরি প্রার্থীর আধিক্য বলা অপেক্ষা রাখে না। বেকার সমস্যা নিরসনে শিক্ষা ব্যবস্থায় সঠিক পরিকাঠামো জরুরী হয়ে পড়ছে। আমাদের তরুণদের সবাই যদি চাকুরির পেছনে ছুটে তাহলে এত তরুণের কর্মসংস্থান হবে কোথায়? নিজের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি অন্যদের কর্মসংস্থানও উদ্যোক্তারা করে থাকেন। তাই বেকার সমস্যা নিরসনে ও জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তরে উদ্যোক্তা তৈরির কোনো বিকল্প নেই। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ব্যতীত বাংলাদেশের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই হাতে কলমে উদ্যোক্তা তৈরিতে মনোসংযোগী নয়। তাঁদের কাজ যেনো কর্মী তৈরি করা আমাদের মান্ধাতার আমলের শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতিবছর লাখো কর্মী তৈরি করছে কিন্তু তাদের কর্মসংস্থানে তাদের ভূমিকা শূন্যের কোঠায়। এ পরিস্থিতিতে বেকার সমস্যা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। সত্যিকারার্থে উদ্যোক্তা ব্যতীত কোনো প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা পায় না, কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় না; উদ্যোক্তাহীন সকল কর্মী বেকার। উদ্যোক্তা ছাড়া অর্থনীতির চাকা থমকে দাঁড়ায়। ড. মোঃ সবুর খান ঠিক এই স্থানে কা-ারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। ভবিষৎ প্রজন্মের জন্য তাঁর ব্যক্তি জীবনের অভিজ্ঞতার ভা-ার খুলে দিয়েছেন। একজন সফল উদ্যোক্তা হতে হলে যে ধরনের প্রস্তুতির দরকার তার ব্যবস্থাও করছেন। শিক্ষার্থীদের হাতে কলমে শিক্ষার জন্য যা যা করার দরকার তার ব্যবস্থা নিচ্ছেন। প্রতিবছর ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে শতশত প্রশিক্ষিত উদ্যোক্তা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়ছে । নতুন নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হচ্ছে। নানা মাত্রা যোগ হচ্ছে আমাদের অর্থনীতিতে। ড. মোঃ সবুর খান নানামুখী কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ ওয়ার্ল্ড এডুকেশন কংগ্রেস গ্লোবাল এওয়ার্ড, ওয়ার্ল্ড কোয়ালটি কমিটমেন্ট গোল্ড অ্যাওয়ার্ড, ফাইনান্সিয়?াল মিরর বিজনেস পুরস্কার, সাউথইস্ট ব্যাংক-দ্য ইন্ড্রাস্ট্রি পুরস্কার, অমর একুশে স্বর্ণ পদক, দ্য মিশন ওয়ালফেয়?ার ট্রাস্ট সম্মাননা ইত্যাদি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD