দুপুরের জোয়ার নিয়ে শঙ্কায় খুলনার উপকূলবাসী
খুলনা প্রতিনিধি
দুপুরের জোয়ার নিয়ে শঙ্কায় খুলনার উপকূলবাসী সকালে কয়রার কাটকাটা এলাকায় মাটি দিয়ে বেড়িবাঁধ মেরামতের চেষ্টা করছেন এলাকার নারী-পুরুষ
খুলনায় মাঝেমধ্যে বাতাসের প্রবল ঝাপটা। কখনো কখনো গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি।
আবার কখনো হালকা বৃষ্টিসহ ঝড়ো বাতাস বইছে। এরই মধ্যে উঁকি দিচ্ছে সূর্য।
প্রকৃতির এই রঙ্গ মঞ্চে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের আতঙ্কে ভুগছেন খুলনার উপকূলবাসী। বিশেষ করে বুধবার (২৬ মে) দুপুরের জোয়ারে পানি বৃদ্ধিতে জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কা করছেন তারা।
উপকূলের রক্ষাকবচ বেড়িবাঁধ নিয়েও দুশ্চিন্তায় পড়েছের লাখ লাখ মানুষ।
সিডর, আইলা, মহাসেন, বুলবুল, ফণি ও আম্পান মোকাবিলার তিক্ত অভিজ্ঞতার আলোকে উপকূলীয় বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে রয়েছেন।
মঙ্গলবার (২৫ মে) দুপুর ও রাতের জোয়ারে অনেক স্থানে বেড়িবাঁধ টপকে পানি প্রবেশ করছে। মঙ্গলবার রাতে জোয়ারের সময় খুলনার কয়রার কাটকাটা, ঘাটাখালি, মহারাজপুর, দক্ষিণ বেতকাশি ও মহেশ্বরীপুরে বেড়িবাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি ঢুকেছে। বুধবার সকাল থেকে ১০টি পয়েন্টে মাটি দিয়ে বাঁধ মেরামতের চেষ্টা করছেন এলাকাবাসী। মঙ্গলবার রাত ১টার দিকে পাইকগাছার দেলুটি চকরি বকরি, কপিলমুনি সিলেমানপুর ও গড়ইখালি খুতখালি পয়েন্টে বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকেছে। দাকোপে কামিনীবাসিয়া, মোজামনগর, গৌর কাঠি, মৌখালি পিচের মাথা, পানখালি পুরাতন খেয়াঘাট, জাবেরের খেয়াঘাট ও খলিসা পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। স্থানীয়দের সহায়তায় ঝুঁকিপূর্ণ ৯টি পয়েন্টে জরুরি ভিত্তিতে মেরামত কাজ করা হচ্ছে।
এদিকে নদীতে জোয়ার না থাকায় এখনও বেড়িবাঁধে পানির চাপ তৈরি হয়নি। তবে দুপুরের ভরা জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের তুলনায় ৩ থেকে ৬ ফুট অধিক উচ্চতায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশংকা রয়েছে।
বুধবার সকাল ১০টায় খুলনায় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার। মাঝেমধ্যে বাতাসের গতিবেগ আরও বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় (সকাল ৯টা পর্যন্ত) বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ২০ মিলিমিটার। স্থানীয়রা বলছেন, ঘূর্ণিঝড় থেকেও জোয়ারের সময় জলোচ্ছ্বাসে বাঁধ টিকিয়ে রাখাই এখন উপকূলে বড় চ্যালেঞ্জ।
কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ হোসেন বলেন, আম্পান বিধ্বস্ত কয়রাবাসী ইয়াসের আতঙ্কে রয়েছে। দুপুরের ভরা জোয়ারে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা। সে সময় নড়বড়ে বাঁধ টিকিয়ে রাখা কষ্টকর হবে।
খুলনা আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ মো. আমিরুল আজাদ বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে খুলনার উপকূলে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। সেই সঙ্গে ঝড়ো বাতাস প্রবাহিত হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন রয়েছে। দুই দিনে খুলনায় ২১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় আর পূর্ণিমার প্রভাব থাকায় নদীর পানি স্বাভাবিক জোয়ারের থেকে তিন থেকে চার ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার হতে পারে।