গুলিবিদ্ধ শ্রমিক কাঞ্চনের ক্ষতিপূরণ দাবিতে বিক্ষোভ
কাজি রাসেল ঢাকা
ঢাকা ঈদের ছুটির দাবিতে আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ পোশাক শ্রমিক কাঞ্চন মিয়ার চিকিৎসা ব্যয় এবং ক্ষতিপূরণসহ শ্রমিকদের ওপর গুলি ও নির্যাতনকারীদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার (২৬ মে) সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির উদ্যোগে এসব কর্মসূচি আয়োজিত হয়।
সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপ্রধান শ্রমিকনেতা তাসলিমা আখ্তারের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জুলহাসনাইন বাবু, গুলিবিদ্ধ শ্রমিক কাঞ্চন মিয়ার বড় ছেলে মোস্তাকিম ও শ্যালক মো. মোস্তফা।
সংহতি জানিয়ে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন—গার্মেন্টস ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার, গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম সবুজ, কেন্দ্রীয় সদস্য বাবুল হোসাইন, গার্মেন্ট শ্রমিক রূপালি আক্তার, মিরপুর অঞ্চল শাখার সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা ইসলাম, সাভার অঞ্চল শাখার সংগঠক ফিরোজ বাংলাদেশীসহ অন্যান্য নেতারা।
সভা সঞ্চালনা করেন কেন্দ্রীয় সমাজকল্যাণ সম্পাদক প্রদীপ রায়। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
সভাপ্রধান তাসলিমা আখ্তার বলেন, করোনার অজুহাতে মালিক সরকার মিলে শ্রমিকবিরোধী অবস্থান নিয়েছে। শ্রমিকের জন্য লকডাউনের বালাই নেই, করোনা টেস্টের সুযোগ নেই, ভ্যাকসিনের খবর নেই।
শুধু তাই নয় ঈদের ছুটির দাবি করলে পুলিশ মালিক-সরকারের নির্দেশে শ্রমিকের বুকে গুলি চালাতেও পিছপা হয়নি। শ্রমিক কাঞ্চন মিয়াকে সারাজীবনের জন্য শারীরিকভাবে ‘অক্ষম’ করেছে, আহত করেছে ৫০ জন শ্রমিককে। কাঞ্চন মিয়ার চিকিৎসা ব্যয় ও ক্ষতিপূরণ নিয়েও টালবাহানা করছে সরকার ও মালিকপক্ষ।
তিনি বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠান কলকারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তর গতকাল ৫০,০০০ টাকা দিয়ে ‘দায়’ সেরেছে। আমরা এই ‘ভিক্ষা’ প্রদানকে ঘৃণাভরে ধিক্কার জানাই। আর দাবি জানাই—অবিলম্বে রানা প্লাজায় নিহত ও আহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ নির্ধারণের জন্য আইএলও-এর ২১ ধারা মোতাবেক হাইকোর্ট যে মানদণ্ড নির্ধারণ করেছিলেন সেই অনুযায়ী কাঞ্চন মিয়ার ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে। তার বর্তমান বয়স অনুযায়ী বাকি জীবনের আয়; তার বর্তমান বেতন স্কেল এবং তার ওপর নির্ভরশীল পরিবারের সদস্য সংখ্যা হিসেব করে এ ক্ষতিপূরণের পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে।
শ্রমিক নেতারা আরও বলেন, সেদিন গুলিবিদ্ধ শ্রমিকরা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিলেও গুরুতর ১৫ জনকে নিয়ে আসা হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। এদের অনেকেই প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে গেলেও এখনো ঢাকা মেডিক্যালের বিছানায় যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন মেশিন অপারেটর কাঞ্চন মিয়া। ছড়রা গুলিতে ঝাঁঝড়া হয়ে যাওয়ায় তার পরিপাকতন্ত্রের একটি অংশ অপারেশন করে ফেলে দিতে হয়েছে। জীবন রক্ষা করার জন্য পেটের মধ্যে পাইপ বসিয়ে মলত্যাগের ব্যবস্থা করা হয়েছে। হাসপাতালের দেওয়া তথ্যমতে, আগামী ৩ মাস পরে আবারও অপারেশন করতে হবে। এ অবস্থায় ৮ সদস্যের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম কাঞ্চন মিয়া কর্মক্ষমতা হারিয়েছেন বাকি জীবনের জন্য; শুধু তাই নয়, তার জীবন এখনো শঙ্কামুক্ত নয়।
তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে শ্রমিক নেতারা বলেন, অবিলম্বে কাঞ্চন মিয়াসহ আহত সব শ্রমিককে মালিকপক্ষের উদ্যোগে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। কাঞ্চন মিয়ার কর্মক্ষমতা ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ। ফলে তার এবং তার পরিবারের সারা জীবনের দায়-দায়িত্ব নিতে হবে।
উল্লেখ্য, ১০ দিনের ঈদের ছুটির দাবিতে গত ১০ মে টঙ্গীর মিলগেট এলাকার হামিম গ্রুপের ক্রিয়েটিভ কালেকশন লিমিটেড কারখানার আন্দোলনত শ্রমিকদের ওপর টিয়ার শেল ও শটগানের ছড়রা গুলি নিক্ষেপ করে পুলিশ। এতে ২০ জন শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হন এবং আরও প্রায় ৫০ জন আহত হন