প্রেমিকাকে টাকা পাঠিয়ে পুলিশের নামে অপপ্রচারে আটক হলো
নিউজ ডেক্স
DC Tejgaon-DMP পেইজ থেকে নেওয়া
তেজগাঁও বিভাগের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ DC Tejgaon – DMP এর ইনবক্সে ২৩ মে’২০২১ তারিখে কিছু স্ক্রীনশট (ফেসবুক আইডি লিংকসহ) জমা হয়। স্ক্রীনশটগুলোতে দেখা যায় আরাফাত জামান তার ফেসবুক আইডি থেকে পোস্ট করেছেন
– ‘পুলিশ কি কখনো ভালো হবে না??’
তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মোঃ শহিদুলাহ বিপিএম-সেবা, পিপিএম-সেবা মহোদয়ের নজরে আসে স্ক্রীনশটগুলো। তেজগাঁও বিভাগের আওতাধীন এলাকায় আরাফাত পুলিশ কতৃক অপদস্থ বা অন্যায় আচরনের শিকার হয়ে থাকলে জড়িত পুলিশ সদস্যদের সনাক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।
আরাফাতের সাথে মেসেঞ্জারে যোগাযোগ করা হয়। আরাফাত জানায় ঘটনার শিকার তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও রুমমেট মোস্তাফিজুর রহমান বিপ্লব। তারা পূর্ব রাজাবাজার এলাকায় একটি মেসে থাকে। ২২ মে সন্ধ্যা ৭.১৫ ঘটিকায় মোস্তাফিজ আরাফাতকে ফোন করে জরুরী ভিত্তিতে তার ৫০০ টাকা দরকার বলে জানায়। রাতে মেসে ফিরে সে টাকা ফেরত দিবে। আরাফাত মোস্তাফিজের মোবাইল ব্যাংকিং নম্বরে দ্রুত ৫০০ টাকা পাঠায়।
আরাফাতের হাত একেবারেই খালি। সকালে মেসের বাজার করতে হবে। মোস্তাফিজকে দেওয়া ওই ৫০০ টাকাই ছিল তার শেষ সম্বল।
রাত দশটায় মেসে ফেরে মোস্তাফিজ। আরাফাত মোস্তাফিজের কাছে ৫০০ টাকা ফেরত চায়। জবাবে মোস্তাফিজ জানায়, সে যখন আরাফাতের কাছে জরুরী ভিত্তিতে পাঁচশত টাকা চায়, তখন হাতিরঝিলের মহানগর ব্রীজ এলাকায় ইউনিফর্ম পরিহিত কয়েকজন পুলিশ তাকে ধরেছিল। পুলিশের ইউনিফর্মে নেমপ্লেট ছিল না। মোস্তাফিজের বডিসার্চ করে কিছু না পেলেও পুলিশ নিজেদের পকেট থেকে গাজা বের করে তার পকেট থেকে পাওয়া গেছে মিথ্যা মাদক মামলা দেওয়ার ভয় দেখায়। তার পকেটে থাকা ৫০০ টাকা কেড়ে নেয়। পুলিশ আরো ৫০০ টাকা দাবী করলে সে আরাফাতের কাছ থেকে ৫০০ টাকা পুলিশের দেওয়া মোবাইল ব্যাংকিং নম্বরে সেই টাকা পাঠায়।
সকালে মেসের বাজার করবে কিভাবে ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ে আরাফাত। রাত দুইটার দিকে আরাফাতের অগোচরে তার মোবাইল নিয়ে আরাফাতের ফেসবুক আইডি থেকে মোস্তাফিজ স্ট্যাটাস দেয় ‘পুলিশ কি কখনোই ভালো হবে না??’
পরদিন ঘুম থেকে উঠে আরাফাত দেখে তার ফেসবুক আইডি’র ওই পোস্টে অনেকেই নানা ধরনের মন্তব্য করেছে। কেউ কেউ ফোন করে প্রকৃত ঘটনাও জানতে চায়। অনুমতি ছাড়া আরাফাতের ফেসবুক আইডি থেকে স্ট্যাটাস দেওয়ায় মোস্তাফিজের সাথে বাক-বিতন্ডাও হয় তার। পোস্টটির স্ক্রীনশট সংরক্ষিত রেখে ডিলিট করে আরাফাত।
২৩ মে দুপুর ১২.৩৩ ঘটিকায় মোস্তাফিজ মেসেঞ্জারে আরাফাতকে ঘটনাস্থল হাতিরঝিলের মহানগর ব্রীজ এলাকার স্ক্রীনশট পাঠায়। দুপুর ০১.০৮ ঘটিকায় পাঠায় মোস্তা পুলিশের মোবাইল ব্যাংকি নম্বরে ৫০০ টাকা (Send Money) পাঠানোর স্ক্রীনশট। এরপর মেসেঞ্জারে একটি ভয়েস বার্তা পাঠিয়ে আরাফাতকে অনুরোধ করে ভয়েস বার্তাটি বন্ধু-বান্ধব, পরিচিতজন ও মিডিয়াকর্মীদেরকে পাঠিয়ে ভাইরাল করতে।
ভয়েস বার্তাটি হলো:
‘আসসালামুআলাইকুম। আমি মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান বিপ্লব। আমি একটি বেসরকারী অফিসে জব করি। আমার অফিস হচ্ছে মেরুল রিং রোডের পোস্ট অফিস গলিতে। অন্যদিনের মতো গতকালও আমি আমার অফিস শেষে আমার পকেটের টাকার স্বল্পতার কারনে হাতিরঝিল রোড দিয়ে আগাচ্ছিলাম। পুলিশ প্লাজা পার হয়ে মহানগর ব্রীজের একটু আগে লোকের পাড় দিয়ে আমি হাটতেছিলাম। অন্ধকারে কয়েকজন পুলিশ ২-৩ জনকে চেক করছে। আমি গেলে আমাকেও বলে- এই দাঁড়ান। আপনি কোথায় যাচ্ছেন? দাঁড়ানোর পর যথারীতি আমাকেও চেক করলো। চেক করে যখন কিছু পেলো না, তখন তারা বলে একটু আগে পিছনে তুই একটা জিনিস ফেলে গিয়েছিলি, এখন তোকে পাইছি। আমি বললাম যে, আমি মাত্র অফিস থেকে আসছি। প্রয়োজনে আপনি আমার অফিসে ফোন দিতে পারেন যে আমি কিছুক্ষন আগে অফিস থেকে আসছি কি না। আর এখন বাসায় যাচ্ছি। আমার কাছে টাকা নেই তাই আমি হেটে যাচ্ছি। তো এটা বলার পর তারা কাগজের প্যাকেটে কিছু গাজা দেখায়। পরে তারা আমার গায়ে হাত দেওয়া শুরু করলো, আর আমার ফোন চাচ্ছিলো। আমি আগেই শুনেছিলাম যে, তারা ফোন নিয়ে আর দেয় না। তো ফোনটা হাতে নিয়ে তাদেরকে বলি আমার ফোনে ওরকম কিছু নেই।আপনারা কি দেখতে চান? আপনারা কোন থানা থেকে এসেছেন? তখন তারা আমাকে বকাঝকা করলো। আমি কেন তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলাম। পরে এক পর্যায়ে অনেক বেশী জোরাজুরি করছিল। আমার বামহাতে হ্যানডকাপ লাগিয়েছে। ৫০০০ টাকা আমার কাছে চায়। ৫০০০ টাকা না দিলে তোকে চালান করে দিবো। তো সেই মূহুর্তে আমার কাছে টাকা ছিল না। ৫০০ টাকা বের করাও কষ্টকর। সকালে আমি বের হওয়ার সময় আমার ফ্রেন্ডের কাছ থেকে ১০০ টাকা ধার নিয়ে মেস থেকে বের হইছি। এতোটাই খারাপ কন্ডিশন ছিল আমার। তো পরবর্তীতে এক আমি এক ফ্রেন্ডের কাছে ফোন দিলাম, আমাকে ৫০০ টাকা বিকাশে দে। আমি তোকে দিয়ে দিবোনে। আমাকে সে বিকাশে ৫০০ টাকা দিলো। আমার আর এক জায়গা থেকে ৫০০ টাকা ছিল বিকাশে। এটা অন্য কাজের জন্য ছিল। এই ৫০০ টাকা আমি তুলেছিলাম। খরচ করি নি। এই ৫০০ টাকা ও আমার ফ্রেন্ড যে ৫০০ টাকা বিকাশ দিয়েছিল, পুলিশ এই ১০০০ টাকা নিলো। তারা আমাকে বকা দিলো। বললো সোজা চলে যাবি। কোনো দিকে তাকাবি না। আমি তাদেরকে কিছুক্ষন ফলো করলাম। আমার সর্বশেষ এটাই বলা যে, পুলিশ দেখলে আমরা কেন ভয় পাবো? পুলিশ দেখলে আমরা ভরসা পাবো যে পুলিশের কাছে আছি, আমরা সেভ আছি। কিন্তু আমার মনে হয় বর্তমান সময়ে কিছু পুলিশ ব্যতীত সিংহভাগ পুলিশ দেখলে ভয় পাবো। তাদের চেয়ে সন্ত্রাসীরা অনেক ভালো। চোর ডাকাতও অনেক ভালো’।
মোস্তাফিজ আরাফাতের হোয়াটস অ্যাপ নম্বরেও ভয়েস বার্তাটি পাঠিয়ে ভাইরাল করতে বলে। তবে আরাফাত তা করে নি।
সংশ্লিষ্ট মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের পদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করে জানা যায়, মোস্তফিজ পুলিশের যে মোবাইল ব্যাংকিং নম্বরে ৫০০ টাকা পাঠিয়েছে বলে আরাফাতের কাছে স্ক্রীনশট পাঠিয়েছে, সেটি আসলে কোন মোবাইল ব্যাংকিং নম্বর নয়। এমনকি ওই নম্বরে গত ৩-৪ মাসে কোন লেনদেনও হয় নি। উল্টো ২২ মে সন্ধ্যা ০৭.২৮ টায় মোস্তাফিজ পটুয়াখালীতে তার গার্লফেন্ডের মোবাইল ব্যাংকিং নম্বরে ১০০০ টাকা পাঠিয়েছে।
২৬ মে সকাল ৮.০৫ ঘটিকায় শেরেবাংলা নগর থানা এলাকা মোস্তাফিজকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত মোস্তাফিজ স্বীকার করেছে আরাফাতের কাছ থেকে ৫০০ টাকা ধার নিয়ে তা ফেরত না দেওয়ার জন্য হাতিরঝিল থানা পুলিশের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগের অভিনব নাটক সাজিয়ে অভিযোগটি আরো গ্রহনযোগ্য করে তুলতে আরাফাতের অগোচরে মোবাইল নিয়ে তার ফেসবুক আইডি থেকে ‘পুলিশ কি কখনোই ভালো হবে না??’ স্ট্যাটাসটি তারই দেওয়া। বানোয়াট ভয়েস বার্তাটিও সে
মোস্তাক আরো জানিয়েছে পুলিশের বিরুদ্ধে সত্য-মিথ্যা যেকোন সংবাদ বড় বড় পত্র-পত্রিকা ও টিভি চ্যানেল ফলাও করে প্রচার করা হয়। ইউটিউবাররা ব্যস্ত হয়ে নতুন নতুন ভিডিও বানিয়ে আপলোড করে। নিমিষেই ভাইরাল হওয়া যায়। যে কারনে সে মিথ্যা ভয়েস বার্তাটি আরাফাতের মেসেঞ্জার ও হোয়াটস অ্যাপে পাঠায়।
মোস্তাফিজের বিরুদ্ধে হাতিরঝিল থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
DC Tejgaon-DMP পেইজ থেকে নেওয়া