Breaking News

গোলমালে মারধর প্রসূতিকে

এক মহিলা ও তাঁর স্বামীকে মারধরের অভিযোগে পুলিশ কল্যাণী পুর এলাকার ৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকে নকুল বিশ্বাস নামে এক জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। মারধরের জেরে এক অন্তঃসত্ত্বার গর্ভস্থ ভ্রূণ নষ্ট হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। ডাক্তারি পরীক্ষায় অবশ্য সরাসরি তার কোনও প্রমাণ মেলেনি।

মারধরে জখম পূর্ণিমা মণ্ডলকে বুধবারই কল্যাণীর জওহরলাল নেহরু মেমোরিয়াল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে (‌জেএনএম) ভর্তি করানো হয়। তাঁদের অভিযোগের ভিত্তিতে বুধবার মাঝরাতে নকুলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বৃহস্পতিবার তাঁকে কল্যাণী আদালতে তোলা হলে জামিনে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

ঘটনার সূত্রপাত সামান্য একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ৪ নম্বর ওয়ার্ডে ‘সতীমা’র মূর্তি সংলগ্ন এলাকায় লতা বৈদ্যের বাড়িতে ভাড়া থাকে তিনটি পরিবার। বুধবার দুপুরে তাদের মধ্যে এক ভাড়াটিয়া অপর্ণা সাহার বছর পাঁচেকের ছেলে পর্ণব আর পাশের বাড়ির একটি শিশু লতাদেবীর বাড়ির ভিতরে লুকোচুরি খেলছিল।

খেলতে-খেলতেই বাড়ির কলপাড় লাগোয়া কয়েকটি কচু গাছে পা পড়ে ওই দুই শিশুর। সে সময়ে প্রতিবেশী, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসের কর্মী বাচ্চু শীল শিশু দু’টিকে বলেন, ‘তোরা কচু গাছ নষ্ট করিস না। ওই কচু তো আমরাই খাই!’ এই নিয়েই ঝামেলার সূত্রপাত। এর পরেই বাচ্চুর সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন অপর্ণা। বাচ্চু আশপাশের জনা সাতেক লোককে তাঁর হয়ে সওয়াল করার জন্য জড়ো করেন। ইতিমধ্যে ওই বাড়ির আর এক ভাড়াটিয়া, ইলেকট্রিকের মিস্ত্রি মনোজ বাড়ি ফেরেন। মনোজেরই স্ত্রী পূর্ণিমা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, মনোজ বাড়ি ফিরে অপর্ণার পক্ষ নেন। তার জেরে তিনিও বাচ্চুর সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েন। বাড়ির মালিক লতা বৈদ্যের বক্তব্য, ‘‘অপর্ণা ও মনোজ একই বাড়িতে পাশাপাশি থাকেন। একে অপরের বিপদে পাশে দাঁড়াবেন, এটাই তো স্বাভাবিক।’’

মনোজ-অপর্ণাদের অভিযোগ, তাঁরা একজোট হয়ে প্রতিবাদ করতেই বাচ্চু দলবল নিয়ে মনোজ ও তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী পূর্ণিমার উপরে চড়াও হয়। মনোজের পিঠে লাঠির বাড়ি পড়ে। লাঠির ঘায়ে ফাটে মাথাও। পূর্ণিমাকেও বেধড়ক লাথি মারা হয়। বাড়ি লাগোয়া সংকীর্ণ নালায় ফেলে মারা হয়েছে পূর্ণিমাকে। এর পরেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তড়িঘড়ি তাঁকে জেএনএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অবস্থা বুঝে তখনই ভর্তি করে নেওয়া হয় তাঁকে।

স্ত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরে সন্ধ্যায় মনোজ পুলিশের কাছে বাচ্চু-সহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু নকুল ছাড়া আর কাউকে পুলিশ ধরতে পারেনি। বৃহস্পতিবার দুপুরে পূর্ণিমার আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করানো হয়। ওই হাসপাতালের সুপার সুবিকাশ বিশ্বাস জানান, তাঁর নিম্নাঙ্গে আঘাতের চিহ্ন আছে। কিন্তু তাঁর ভ্রূণ নষ্টের কারণ যে মারধর, তা সরাসরি বলা যাবে না। জরায়ুতে আঘাতের চিহ্ন মেলেনি।

পুলিশ জানায়, প্রধান অভিযুক্ত বাচ্চু ঘটনার পর থেকেই পলাতক। তাঁর সন্ধানে তল্লাশি চলছে। এ দিন বিকেলে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, অভিযুক্তেরা বেপাত্তা। ফলে তাঁদের কারও তরফে বক্তব্য মেলেনি।  ধৃত নকুল আদালতকে জানিয়েছেন, কিছু দিন আগেই তাঁর অস্ত্রোপচার হয়েছে, তিনি অসুস্থ। এর পরেই তাঁর জামিনের আবেদন মঞ্জুর করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD